এস.এ নেহা 11 Oct, 21
আজ ১০ অক্টোবর ২০২১। আজ বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। এবারের মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো “অসম বিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্য”। ইতিহাসের পাতায় এ দিনটির বিশেষত্ব হলো ১৯৯২ সালের ১০ অক্টোবর World Federation for Mental Health (WFMH) - এর ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল রিচার্ড হান্টারের উদ্যোগে প্রথমবার সারা বিশ্বের প্রায় ১৫০ টি দেশে এ দিবসটি পালন করা হয়। তবে কোন কোন দেশ এ দিনটিকে কেন্দ্র করে মানসিক রোগ সচেতনতা সপ্তাহ হিসেবেও পালন করে থাকে। এরপর থেকে প্রতি বছর মধ্য দিয়ে হচ্ছে। বাংলাদেশও বেশ উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে আজকের এ বিশেষ দিনটি পালন করছে। দিবসটি উপলক্ষে দেশব্যাপী সরকারি - বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে র্যালি, সেমিনার, আলোচনা সভাসহ নানা আয়োজন।
১৯৯২ সাল থেকে এ দিবসটি বিশ্বব্যাপী পালন করা হলেও এর প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয় ১৯৯৪ সাল থেকে। তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল ইউজিন ব্রডির পরামর্শে প্রথমবার ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস ’ একটি প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে পালন করে আসছে। সে বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলো “ বিশ্ব জুড়ে মানসিক স্বাস্থ্য সেবার মান বাড়ানো ”। আর এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় “ অসম বিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্য ”।
বলা হয়ে থাকে দেহ ও মন একে অন্যের পরিপূরক। কিন্তু বাস্তবে দৈহিক ব্যাধির চিকিৎসা নিয়ে আমাদের সমাজ যতটা তৎপর মানসিক ব্যাধির চিকিৎসা নিয়ে ঠিক ততটাই অমনোযোগী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে বিশ্বে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন করে ব্যাক্তি আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি জন্য । করোনা মহামারীতে এ সংখ্যা আরো বৃদ্ধির দিকে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের প্রাপ্ত বয়স্ক জনসংখ্যার ১৮ শতাংশ এবং শিশু ও কিশোরদের ১২ শতাংশ মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত।
বাংলাদেশে কেন এ মানসিক ব্যাধির ঊর্ধ্বগতি! প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই যে বিষয়টা চোখে পড়েই তা হচ্ছে আত্মহত্যা। এর প্রধান কারণ হতে পারে দেশের একটি বিরাট অংশ এখনও বিশ্বাস করে না যে, দেহের ন্যায় মনেরও রোগ হতে পারে। এ বিরাট জনগোষ্ঠীর মানসিক রোগ সম্পর্কে অজ্ঞতা,ভ্রান্ত ধারণা, লোক লজ্জা, কুসংস্কার আচ্ছন্ন মস্তিষ্ক এ ব্যাধির জন্য দায়ী। এছাড়াও পারিবারিক ভাঙন ও নিঃসঙ্গতা , বেকারত্বের অভিশাপ, অর্থনৈতিক বিপর্যয়, নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, অপসংস্কৃতি, মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা ইত্যাদির জন্যই দিনকে দিন এ ব্যাধির বৃদ্ধি তরান্বিত হচ্ছে।
দৈহিক রোগ থেকে মুক্তির জন্য যেমন চিকিৎসা নিতে হয় ঠিক তেমন করে মানসিক রোগেরও চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। মানসিক রোগ থেকে মুক্তির জন্য বিশেষজ্ঞরা বেশ কিছু কার্যকরী পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যেমনঃ সমস্যাকে ভয় না পেয়ে খোলামেলা আলোচনা করা; নারী, শিশু ও বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে যত্নবান হওয়া; মাদকদ্রব্য পরিহার করা; পরিবারের সাথে গুণগত সময় কাটানো; অবসর সময়ে নতুন কিছু করা যেমন হতে পারে বই পড়া, নিজের ব্যাক্তিগত শখ, আহ্লাদ মেটানো; চিকিৎসার জন্য মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে আধুনিক চিকিৎসা গ্রহণ করা ইত্যাদি। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন সেমিনার, লিফলেট বিতরনের মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করা, প্রয়োজনে খেলার মাঠ,পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রে সৃষ্টি করা। কেননা, মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন হওয়া জরুরি।
এস.এ নেহা
লেখকঃ শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
সদস্য, জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি ফিচার,কলাম এন্ড কন্টেন্ট রাইটার্স